এক বছরে শত শত মানুষকে ফাঁসি দিল সৌদি আরব

Loading...

এক বছরে শত শত মানুষকে ফাঁসি দিল সৌদি আরব

২৮ বছর বয়সী মোহাম্মদ সাদ একজন মিসরীয় মৎস্যজীবী। প্রতিবারের মতো শর্ম আল-শেখ উপকূলে গিয়েছিলেন মাছ ধরতে। কিন্তু তিনি আর ফিরে আসেননি।

তাঁর পরিবার মাসের পর মাস খোঁজ করেও কোনো তথ্য পায়নি। এক বছর পর জানা যায়, সাদ সৌদি আরবের উত্তরাঞ্চলীয় তাবুক কারাগারে আটক রয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে আনা হয় মাদক পাচারের অভিযোগ।

কাতারের সব আপডেট হোয়াটসঅ্যাপে পেতে এখানে ক্লিক করুন

Loading...

আট বছর বন্দী থাকার পর গত ২১ অক্টোবর সাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে তাঁর পরিবারকে কিছুই জানানো হয়নি। পরিবারের লোকেরা খবরটি জানতে পেরেছেন সাদের সঙ্গে কারাগারে থাকা এক ব্যক্তির কাছ থেকে।

শুধু তা-ই নয়, মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পর সাদকে কোথায় কবর দেওয়া হয়েছে—সে বিষয়েও কোনো তথ্য নেই তাঁর পরিবারের কাছে।

Loading...

সোমবার (১৭ নভেম্বর) সিএনএন জানিয়েছে, সাদ ছিলেন সৌদি আরবে চলতি বছরে ফাঁসি হওয়া কয়েক শ মানুষের একজন। এর মধ্যে বেশির ভাগের বিরুদ্ধেই প্রাণঘাতী নয় এমন মাদক-সম্পর্কিত অভিযোগ ছিল।

বার্লিনভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন ইএসওএইচআর এবং সৌদি গণমাধ্যমের খবর পর্যালোচনা করা সংগঠন ‘রিপ্রাইভ’ জানিয়েছে, ২০২৪ সালে দেশটিতে ৩৪৫ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে—যা গত কয়েক বছরের তুলনায় দ্বিগুণ।

Loading...

ফাঁসি হওয়া ব্যক্তিদের একটি বড় অংশই ছিলেন বিদেশি শ্রমিক। বিশেষ করে—মিসরীয়, সোমালি ও ইথিওপিয়ার নাগরিক। জীবিকার সন্ধানে তাঁরা সৌদি আরবে গিয়েছিলেন এবং পরে দেশটির কঠোর বিচারব্যবস্থায় আটকে পড়েন।

জানা গেছে, বর্তমানে সৌদি আরবের তাবুক কারাগারে আরও বেশ কয়েকজন বিদেশি মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের অপেক্ষায় আছেন। তাঁদের একজন এসসাম আল-শাজলি। ২৭ বছর বয়সী শাজলি মিসরের একজন মৎস্যজীবী। তাঁর বিরুদ্ধে অ্যামফিটামিন ও অল্প পরিমাণে ‘হেরোইনসদৃশ’ পদার্থ বহনের অভিযোগ আনা হয়েছিল। তবে তাঁর পরিবার দাবি করেছে, নৌকায় কী ছিল, শাজলি এর কিছুই জানতেন না।

কাতারের সব আপডেট হোয়াটসঅ্যাপে পেতে এখানে ক্লিক করুন

Loading...

এদিকে বিনা দোষে মৃত্যুদণ্ডের অভিযোগগুলো অস্বীকার করেছে সৌদি সরকার। জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধিদের পাঠানো এক চিঠির জবাবে সৌদি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে—কোনো গোপনীয়তা নেই, তিন ধাপের বিচারপ্রক্রিয়া মানা হয়, বিদেশিদের কনস্যুলার সহায়তাও দেওয়া হয় এবং মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পর দণ্ডপ্রাপ্তদের দেহ নিজ দেশের দূতাবাসে হস্তান্তর করা হয়। তবে বহু পরিবার ও অধিকারকর্মী দাবি করেছেন, বিচারের ক্ষেত্রে অনেক সময় আইনজীবীর সহায়তা নিতে দেওয়া হয় না। আর দেওয়া হলেও বিচারের ফল বদলায় না।

Loading...

তাবুক কারাগার থেকে পাওয়া বিবরণে বলা হয়েছে, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দীরা প্রতিদিন সকালে আশঙ্কায় থাকেন—সেদিন তাঁদের নাম ডাকা হবে কি না।

সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান (এমবিএস) তাঁর দেশকে আধুনিকায়নের প্রচারণা চালাচ্ছেন। নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতি, ধর্মীয় নীতি পুলিশের কার্যক্রম সীমিত করা, সাংস্কৃতিক উৎসব, বিশ্বকাপ আয়োজন ইত্যাদির মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে সৌদি আরবের ইতিবাচক ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে চাচ্ছেন তিনি।

Loading...

এই সপ্তাহেই তিনি সাত বছর পর প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্র সফরে গেছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর অর্থনীতি ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিয়ে বৈঠক হবে। এ বৈঠকে মানবাধিকার ইস্যু আলোচনায় আসার সম্ভাবনা কম। তবে অধিকারকর্মীরা বলছেন, বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য, অস্ত্রচুক্তি ও কূটনৈতিক সম্পর্কের আড়ালে সৌদি আরবে চলছে ভয় দেখানোর নীতি।

Loading...

রিপ্রাইভের মধ্যপ্রাচ্যে মৃত্যুদণ্ড নিয়ে কাজ করা একটি দলের প্রধান জিদ বায়সিউনি বলেছেন, এটি মিথ্যা ও নির্মমতার এক ব্যবস্থা। ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত সবকিছুই গোপন ও নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়। তাই ভুক্তভোগীর পরিবারের জন্য অপেক্ষা আর আতঙ্ক ছাড়া কোনো পথই খোলা নেই।

ফেসবুকে আমাদের সাথে থাকতে লাইক দিন এখানে

Loading...

আরো পড়ুন

আজকের পত্রিকা

Loading...

Loading