ক্ষোভে ফুঁসছে চট্টগ্রাম
Loading...

ক্ষোভে ফুঁসছে চট্টগ্রাম
চট্টগ্রাম বন্দরের দুটি টার্মিনাল পরিচালনায় বিদেশি দুই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় কর্ণফুলীর তীরে লালদিয়া টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনা নিয়ে একটি এবং ঢাকার অদূরে কেরানীগঞ্জের পানগাঁও নৌ-টার্মিনাল পরিচালনায় অন্য চুক্তিটি হয়।
গত সোমবার ঢাকায় আয়োজিত পৃথক দুই অনুষ্ঠানে চুক্তি দুটি সই হয়েছে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরের লাভজনক নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) দুবাইভিত্তিক ডিপি ওয়ার্ল্ডকে ইজারা দেওয়ার জন্য সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।
কাতারের সব আপডেট হোয়াটসঅ্যাপে পেতে এখানে ক্লিক করুন
Loading...
পতেঙ্গার লালদিয়ার চরে একটি কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণের জন্য ডেনিশ কোম্পানি এপি মুলার মায়ের্¯ে‹র সঙ্গে ৩০ বছরের চুক্তি করেছে সরকার। অন্যদিকে ২২ বছরের জন্য ঢাকার কেরানীগঞ্জের পানগাঁও নৌ-টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে সুইজারল্যান্ডের প্রতিষ্ঠান মেডলগ এস।
প্রায় সব স্টেকহোল্ডারের বিরোধিতার পরও সরকারের এমন সিদ্ধান্তে ক্ষোভে ফুঁসছে চট্টগ্রাম। ব্যবসায়ী নেতা থেকে শুরু করে পেশাজীবী সংগঠন, শ্রমিক সংগঠন ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা সরকারের এই একপেশে সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ।
Loading...
অন্যদিকে বন্দর ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে নানা কর্মসূচি পালন করে আসছে কয়েকটি শ্রমিক সংগঠন। জানা গেছে, আগামী ২২ নভেম্বর চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের (স্কপ) বিভাগীয় শ্রমিক কনভেনশন থেকে এসব চুক্তির প্রতিবাদে কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হবে।
বিদেশিদের বন্দর ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানানোর পর থেকেই এর বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিল বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন ও রাজনৈতিক দল। কিন্তু কয়েক মাস ধরে বড় রাজনৈতিক দলগুলো এ ইস্যুতে নীরব। তবে বামধারার রাজনৈতিক দল এবং শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ নানা কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে।
Loading...
গত কয়েক মাস শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেল, গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা, বন্দর রক্ষা পরিষদসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন গণঅনশন, গণমিছিল, বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশসহ নানা কর্মসূচির মাধ্যমে সরকারকে বন্দর ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছে।
তাদের ভাষ্য, চট্টগ্রাম বন্দর দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের ৯২ শতাংশেরও বেশি এ বন্দর দিয়ে পরিচালিত হয়। বিদেশি অপারেটরের হাতে বন্দরের গুরুত্বপূর্ণ টার্মিনাল ইজারা দিলে দেশের সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়বে।
এদিকে বন্দর ও আশপাশের এলাকায় সভা-সমাবেশ ও জমায়েতের ওপর চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) আগামী ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় অনভিপ্রেত ঘটনার আশঙ্কা করা হচ্ছে। আন্দোলনকারীরা বলছেন, বন্দর ইজারা দেওয়ার বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলনকে স্তব্ধ করতেই সিএমপি এ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
বন্দর ইজারার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে কয়েক মাস ধরে নানা কর্মসূচি পালন করে আসছে শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ। গত মাসে বন্দর অভিমুখে মিছিল নিয়ে যেতে চাইলে পুলিশ তাদের বাঁধা দেয়। পরে সড়কে অবস্থান নিয়ে চলে বিক্ষোভ।
গত সপ্তাহে মানববন্ধন কর্মসূচি ডেকে এ আন্দোলনে যোগ দেয় জামায়াতপন্থি শ্রমিক সংগঠন শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন। এ ছাড়া চট্টগ্রাম বন্দর রক্ষা পরিষদ নামে একটি নাগরিক সংগঠন দীর্ঘদিন ধরেই মাঠে সোচ্চার। তাদের দাবি, নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালের পাশে নৌবাহিনীর ঘাঁটি এবং লালদিয়ার চরের পাশে বিমানবাহিনীর ঘাঁটি অবস্থিত। এগুলো দেশের নিরাপত্তার জন্য খুবই স্পর্শকাতর।
টার্মিনাল দুটি বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দিলে দেশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আবার বিদেশি কোম্পানি দায়িত্ব নিলে অনেক শ্রমিক চাকরি হারাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
কাতারে বিভিন্ন কোম্পানিতে নতুন চাকরির খবর
Loading...
স্কপের সমন্বয়ক ও চট্টগ্রাম বন্দর সিবিএর সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল্লাহ বাহার আমাদের সময়কে বলেন, বন্দরের লাভজনক প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে ডেকে আনার কোনো প্রয়োজন নেই। এ ছাড়া দুটি টার্মিনাল কোন প্রক্রিয়ায় ইজারা দেওয়া হয়েছে, তাও পরিষ্কার নয়।
সবচেয়ে বড় হুমকির বিষয় হলো, এনসিটির পাশে নৌবাহিনীর ঘাঁটি, লালদিয়ার পাশে বিমানবাহিনীর ঘাঁটি; এর পাশেই রয়েছে তেলের স্থাপনা। ফলে এখানে বড় ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হবে।
Loading...
দুই টার্মিনালের চুক্তি বাতিল এবং এনসিটি বিদেশিদের হাতে দেওয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আগামী ২২ নভেম্বর শ্রমিক কনভেনশন ডাকা হয়েছে। সেখান থেকে অবরোধ-হরতালের মতো কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা আসতে পারে বলে জানান এই শ্রমিক নেতা।
প্রবীণ শ্রমিক নেতা ও শ্রম সংস্কার কমিশনের সদস্য তপন দত্ত আমাদের সময়কে বলেন, বিদেশিদের বন্দর ইজারা দিলে ক্ষতি বাদে লাভ হবে না। লাভজনক প্রতিষ্ঠান কেন বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে দেব? তিনি যোগ করেন, ডিপি ওয়ার্ল্ডের পেছনে আমেরিকা রয়েছে। ডিপি ওয়ার্ল্ডের রেকর্ডও ভালো নয়।
Loading...
চট্টগ্রাম বন্দরে আগে তিন থেকে চার হাজার এবং ডকে ১৪ হাজার শ্রমিক ছিল জানিয়ে তপন দত্ত বলেন, বর্তমানে বন্দর ও ডক মিলে ১০ থেকে ১২ হাজার শ্রমিক আছেন। বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কাছে বন্দর ইজারা দিলে বেকারত্ব আরও বাড়বে। উপরন্তু ৫ আগস্ট পরবর্তীকালে ৫ শতাংশ বেকারত্ব বেড়েছে।
ড. ইউনূস বেকারত্ব দূরীকরণ ও বৈষম্য দূর করার আশ্বাস দিয়ে ক্ষমতায় বসেছেন। কিন্তু বাস্তবে হচ্ছে উল্টোটা। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের দখল নিতে পারলে আমেরিকা বঙ্গোপসাগরেও তাদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করবে, যা দক্ষিণ এশিয়ায় একটি ভূ-রাজনৈতিক সংকট তৈরি করবে। ফলে বাংলাদেশ পরিণত হবে গাঁজার মতো একটি যুদ্ধক্ষেত্রে।
Loading...
চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক পরিচালক ও ইউনাইটেড বিজনেস ফোরামের নেতা সীকম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিরুল হক বলেন, আমরা বিদেশি বিনিয়োগের বিরোধী নই। তবে সেটা হতে হবে ন্যায্য। উন্মুক্ত টেন্ডারের ভিত্তিতে।
জামায়াত-হেফাজতের বিবৃতি
বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দর ইজারার চুক্তির প্রতিবাদ জানিয়েছে হেফাজতে ইসলাম ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। বন্দরের নিয়ন্ত্রণ কোনোভাবেই বিদেশি সংস্থার হাতে দেওয়া যাবে না বলে হুশিয়ারি দিয়েছে হেফাজত। আর জামায়াতে ইসলামী পতিত স্বৈরাচারের দোসরদের হাতে বন্দর তুলে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করছে।
Loading...
গত সোমবার বিকালে হেফাজতে ইসলামের আমির শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ও মহাসচিব সাজেদুর রহমান এবং চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমির মুহাম্মদ নজরুল ইসলামের পাঠানো পৃথক বিবৃতিতে তাদের এমন অবস্থান জানানো হয়।
হেফাজতের পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, অর্থনৈতিক শক্তির প্রাণকেন্দ্র চট্টগ্রাম বন্দর। দেশের গুরুত্বপূর্ণ এই বন্দর বিদেশি প্রতিষ্ঠান বা শক্তির হাতে ব্যবস্থাপনাগতভাবে স্থানান্তর করার যে কোনো উদ্যোগ রাষ্ট্রের স্বার্থের বিরুদ্ধে স্পষ্ট হুমকি এবং জাতীয় নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মুখে ফেলে দিতে পারে।
এ ধরনের পদক্ষেপ দেশের ভবিষ্যৎ, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তাকে দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। কৌশলগত স্থাপনা পরিচালনার নামে কোনো বিদেশি আধিপত্য, বিশেষ সুবিধা বা গোপন চুক্তি জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে সম্পূর্ণ অসঙ্গত ও অগ্রহণযোগ্য।
Loading...
অন্যদিকে জামায়াতের বিবৃতিতে বলা হয়, একই দিন গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন নিয়ে গোলকধাঁধা তৈরি করে পতিত স্বৈরাচারের দোসরদের বন্দরের মালিকানা তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।
শেখ হাসিনার আমলে নেওয়া সিদ্ধান্ত এগিয়ে নেওয়ার অভিযোগ করে বিবৃতিতে বলা হয়, লালদিয়ার চর যে প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হচ্ছে, সেই এপিএম টার্মিনালের সঙ্গে কনটেইনার ব্যবসায় জড়িত শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ এক আত্মীয়। তিনি এপিএম টার্মিনালের স্থানীয় অংশীদার।
Loading...
ফলে শেখ হাসিনার আত্মীয় হতে যাচ্ছেন আগামী ৩০-৪০ বছরের জন্য চট্টগ্রাম বন্দরের সবচেয়ে আধুনিক টার্মিনালের অন্যতম মালিক। এ ছাড়া পানগাঁও টার্মিনালের দায়িত্ব যে সুইস কোম্পানিকে দেওয়া হয়েছে, এর স্থানীয় এজেন্ট আওয়ামী লীগের নেতা সাবের হোসেন চৌধুরী।
ফেসবুকে আমাদের সাথে থাকতে লাইক দিন এখানে
Loading...
আরো পড়ুন
Loading...






