প্রবাসে মৃত্যু যেন ‘মরার ওপর খাঁড়ার ঘা’, মরদেহ নিয়ে যত ভোগান্তি

Loading...

প্রবাসে মৃত্যু যেন ‘মরার ওপর খাঁড়ার ঘা’, মরদেহ নিয়ে যত ভোগান্তি

বছরের পর বছর রেমিট্যান্সের যোগান দেয়া যোদ্ধাদের কেউ কেউ শেষবার ফিরে আসেন নিথর দেহে। প্রতিবছর গড়ে চার হাজারের বেশি প্রবাসীর মরদেহ দেশে ফিরছে। প্রবাসে মারা গেলে আর্থিক সহায়তাসহ সরকারি সুযোগ-সুবিধা থাকলেও বৈধ-অবৈধের বেড়াজালে আটকে থাকে অনেকের ভাগ্য।

এমনকি বিমানবন্দরেও মরদেহ গ্রহণে পোহাতে হয় বিড়ম্বনা। অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈধ কিংবা অবৈধ নয়, প্রত্যেক অভিবাসীকর্মীর জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।

কাতারের সব আপডেট হোয়াটসঅ্যাপে পেতে এখানে ক্লিক করুন

Loading...

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ৮ নম্বর গেইট। চোখে মুখে বিষণ্ণতা নিয়ে এখানে অপেক্ষায় থাকেন অনেক প্রবাসীর স্বজন। এ গেট দিয়ে শেষবারের মতো কোনো কোনো প্রবাসী পরিবারের কাছে আসেন নিথর দেহে।

এমন একজন সাভারের আক্কাস আলী। ২০ বছর ধরে দেশের বাইরে ছিলেন তিনি। দুবাই থেকে শেষবার ফিরেছে তার বাক্সবন্দি মরদেহ। কর্মস্থলেই মারা গেছেন গত নভেম্বরে। যাবতীয় কার্যক্রম শেষে পরিবারের সদস্যরা তাকে গ্রহণ করেছেন। ২০২৩ সালে সৌদি আরবে তার ভাই আলী হোসেনও মারা গিয়েছিলেন। আক্কাসের পরিবারের মতো আরও কয়েকজন প্রবাসীর স্বজনরা তখনও অপেক্ষায়।

Loading...

পরিবারের স্বজনরা জানান, কাগজ পত্রের জন্য তারা ভোগান্তিতে পড়েছেন। একজন প্রবাসী দেশকে সেবা দিয়ে গেছে। তবে তার মৃত্যুর পর তার মরদেহ নিয়ে আসতে গিয়ে সে সেবা তারা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেন।

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ৩০টি দেশ থেকে প্রবাসীদের মরদেহ ফিরেছে ২ হাজার ৯৯৯ জনের। এরমধ্যে বিভিন্ন দেশে ৮৮ জন আত্মহত্যা ও হত্যার শিকার হয়েছে ১২ জন প্রবাসী। সর্বাধিক মরদেহ এসেছে সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, ওমান, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে। গত অর্থবছরে দেশে ফিরে ৪ হাজার ৮৯২ জনের মরদেহ।

Loading...

ওয়্যারবী ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুল হক বলেন, ‘এ যে এতোগুলো লোকের মৃত্যু! হাজার হাজার লোকের মৃত্যু আমরা দেখি প্রতিবছর, এটি আমাদের কষ্ট দেয়। মরদেহ নিয়ে আমাদের রিপোর্ট হয় না। মরদেহ ফেরত আসার পরে আমরা যদি কিছু পেয়েও যাই তারা তো মানবেও না।’

বিএমইটির ছাড়পত্র বা বীমা গ্রহণ করে প্রবাসে গেলে অসুস্থ কিংবা মৃত্যু হলে তাদের পরিবারকে সহযোগিতা করে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড। কেবল গত অর্থবছরে প্রবাসীদের মরদেহ দেশে ফেরাতে দুইশো কোটি টাকা খরচ হয়েছে।

কাতারে বিভিন্ন কোম্পানিতে নতুন চাকরির খবর

Loading...

ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড প্রকল্প পরিচালক ড. এ টি এম মাহবুব উল করিম বলেন, ‘তিনি যদি ডকুমেন্টেড কর্মী হন, মারা গেলে যত টাকাই লাগুক আমরা তাৎক্ষণিকভাবে তাদের ডেথবডি আমাদের খরচে নিয়ে আসি। গত অর্থ বছরে আমরা ৫ হাজারের বেশি ডেথবডি নিয়ে এসেছি। তবে তিনি যদি আনডকুমেন্টেড হন, সেক্ষেত্রে তার বডি নিয়ে আসা আমাদের আইনের মধ্যে পড়ে না।’

তবে অভিবাসন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিএমইটির কার্ড নিয়ে যাবার পরও কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়া ও রিক্রুটিং এজেন্টগুলোর প্রতারণায় অনেকে অবৈধ হয়ে যান। এতে সরকার ঘোষিত তিন লাখ টাকার ক্ষতিপূরণ পাওয়াও আটকে যায় নিয়মের বেড়াজালে।

Loading...

বাংলাদেশ লেবার ফেডারেশন সাধারণ সম্পাদক সাকিল আখতার চৌধুরী বলেন, ‘মৃত্যু সনদ দেয়া। তাদের সেখানে নিয়োগপত্র ছিলো কিনা এ বিষয়টিও তাদের ক্ষতিপূরণ পাওয়ার ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি করে।’

প্রবাসে মৃত্যুর পর এ সহায়তার জটিলতা এড়াতে ক্ষতিপূরণ আদায়ে প্রক্রিয়া সহজ করা, বিদেশে যাওয়ার আগেই উত্তরাধিকার নির্ধারণ ও কর্মীদের কাছ থেকে গ্রহণ করা অর্থ সরাসরি তাদের কল্যাণে ব্যয় করার পরামর্শ দিচ্ছেন অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা।

Loading...

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ অধ্যাপক ড. তাসনিম আরেফা সিদ্দিকী বলেন, ‘উত্তরাধিকার নির্বাচনের জন্য যে বিলম্ব হয় সেটি হবে না। অন্য উত্তরাধিকারী জোর করে এটি নিয়েও নিতে পারবে না।

যে পরিমাণ টাকা সরকার এ খাত থেকে পাচ্ছে, প্রায় সারে তিন হাজার টাকা ব্যক্তিপ্রতি তা গ্রহণ করছেন। এ নিয়মিত-অনিয়মিতর বাধা তৈরি না করে যদি এদের দেয়ার ব্যবস্থা হয় তাহলে সেটি হবে যুক্তিসংগত ব্যবহার।’

Loading...

একদিকে বিমানবন্দর থেকে দ্রুত পরিবারের কাছে প্রবাসীদের মরদেহ হস্তান্তরের দাবি স্বজনদের। অন্যদিকে কাগজপত্রের বিড়ম্বনা কমানোসহ কথিত বৈধ-অবৈধের তফাৎ তুলে দিয়ে প্রত্যেক অভিবাসীকর্মীর জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতের পরামর্শ অভিবাসন বিশেষজ্ঞদের।

ফেসবুকে আমাদের সাথে থাকতে লাইক দিন এখানে

Loading...

আরো পড়ুন

Loading...

Loading