বেথলেহেমে ফের বড়দিন: অর্ধেক আনন্দ, অর্ধেক বিষাদ

Loading...

বেথলেহেমে ফের বড়দিন: অর্ধেক আনন্দ, অর্ধেক বিষাদ

দীর্ঘ দুই বছর বিরতির পর যিশু খ্রিস্টের জন্মস্থান হিসেবে পরিচিত ফিলিস্তিনের বেথলেহেমে ফিরল বড়দিনের চিরচেনা উৎসবের আমেজ। বড়দিনের প্রাক্কালে শহরের ম্যাঞ্জার স্কয়ারে ড্রাম ও ব্রাসের সুরে প্যারেড করে স্কাউট দল।

তাদের কণ্ঠে বড়দিনের গান আর যন্ত্রে ফিলিস্তিনি ঐতিহ্যের সুর, বড়দিনের উদযাপনের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার নিজস্ব জাতীয় পরিচয়। তবে এই উৎসবের আবহেও আনন্দের সঙ্গে মিশে ছিল দুঃখ।

কাতারের সব আপডেট হোয়াটসঅ্যাপে পেতে এখানে ক্লিক করুন

Loading...

বুধবার বড়দিনের প্রাক্কালে আয়োজিত এই উৎসবের নেপথ্যে ছিল এক গভীর বিষাদ। যিশু খ্রিস্টের জন্মস্থান হিসেবে পরিচিত এই শহরে দীর্ঘ দুই বছর পর উৎসবের চিরচেনা দৃশ্যগুলো ফিরে এসেছে।

জেরুজালেমের ল্যাটিন ক্যাথলিক চার্চের আর্চবিশপ পিয়েরবাতিস্তা পিজাবাল্লা উৎসবে অংশ নিয়ে বিশ্ববাসীর উদ্দেশে বলেন, “আমি বেথলেহেম থেকে শুধু এই শহরের জন্য নয় বরং পুরো বিশ্বের জন্য আলোর বার্তা দিচ্ছি। আমি মানুষের চেহারায় সেই আলোর উপস্থিতি লক্ষ্য করেছি।”

সম্প্রতি গাজা সফর শেষে বেথলেহেমে ফেরা আর্চবিশপ পিজাবাল্লা সমবেত মানুষের সামনে গাজার ফিলিস্তিনিদের অবর্ণনীয় কষ্টের কথা তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, “গাজায় আমি সম্পূর্ণ ধ্বংসযজ্ঞ দেখেছি। কিন্তু সেই শূন্যতার মাঝেও মানুষের মধ্যে বেঁচে থাকার তীব্র আকাঙ্ক্ষা অনুভব করেছি। তারা আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছে যে, আমরা আবার ফিরে আসতে পারি এবং ধ্বংস স্তূপের ওপর নতুন করে নির্মাণ করতে পারি।”
সংহতি ও সংঘাতের প্রেক্ষাপট

কাতারে বিভিন্ন কোম্পানিতে নতুন চাকরির খবর

Loading...

২০২৩ ও ২০২৪ সালে গাজার ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে বেথলেহেমের বড়দিনের উৎসব স্থগিত রাখা হয়েছিল। ওই দুই বছরে ফিলিস্তিনি ছিটমহলটিতে ইসরায়েলের গণহত্যামূলক যুদ্ধে ৭০ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।

এছাড়া অধিকৃত পশ্চিম তীরে গত দুই বছরে ইসরায়েলি সেনা ও বসতি স্থাপনকারীদের হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন ১,০০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি। এমনকি ফিলিস্তিনি খ্রিস্টানরাও এই আক্রমণ থেকে রেহাই পাননি। গত জুলাই মাসে গাজার একমাত্র ক্যাথলিক গির্জায় হামলায় তিনজনের মৃত্যু হয়।

অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধবিরতি কিছুটা স্বস্তি দিলেও গাজায় ইসরায়েলি হামলা ও পশ্চিম তীরে সামরিক অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

উৎসবের আমেজ ম্যাঞ্জার স্কয়ারের পরিবেশকে কিছুটা হালকা করলেও যুদ্ধের রূঢ় বাস্তবতা সেখানে অনুপস্থিত ছিল না। উৎসব শুরু হওয়ার মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগেও নিকটবর্তী দেহিশেহ এবং আইদা শরণার্থী শিবির থেকে তিন তরুণকে গ্রেফতার করেছে ইসরায়েলি বাহিনী।

কাতারে বিভিন্ন কোম্পানিতে নতুন চাকরির খবর

Loading...

কঠিন যাত্রা

ইসরায়েলি দখলদারিত্বসহ নানা প্রতিকূলতায় পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি খ্রিস্টানদের সংখ্যা ক্রমশ সংকুচিত হলেও, এ অঞ্চলের খ্রিস্টীয় জীবনের অন্যতম বৃহৎ প্রতীক হিসেবে এবার বড়দিনের উৎসবে যোগ দেন প্রায় ১৫০০ ফিলিস্তিনি ও বিদেশি দর্শনার্থী। তবে এই আনন্দযাত্রার পরতে পরতে মিশে ছিল অধিকৃত ভূমির রূঢ় বাস্তবতা।

অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেম থেকে বেথলেহেমে আসা ফিলিস্তিনি খ্রিস্টান জর্জ জালুম আল জাজিরাকে বলছিলেন উৎসবের আমেজ নিয়ে তার মিশ্র অনুভূতির কথা।

তিনি বলেন, “আজকের এই পরিবেশ অর্ধেক আনন্দ আর অর্ধেক বিষাদে ভরা। কারণ গাজায় আমাদের ভাইবোনেরা এখনো বোমাবর্ষণ আর হত্যাকাণ্ডের শিকার হচ্ছে। আমরা শুধু প্রার্থনা করি যেন এই যুদ্ধ থামে, রক্তপাত বন্ধ হয় এবং পবিত্র ভূমিতে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়।”

Loading...

পশ্চিম তীরের অন্যান্য শহর ও গ্রাম থেকে আসা ফিলিস্তিনিদের জন্য বেথলেহেমের পথটি ছিল এক দীর্ঘ অগ্নিপরীক্ষার মতো। মানচিত্রের দূরত্ব কম হলেও পথের বাঁকে বাঁকে থাকা ইসরায়েলি চেকপোস্টে তাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে।

রামাল্লার নিকটবর্তী বিরজেইত থেকে আসা হুসাম জুরাইকাত বলেন, “শান্তি আর ভালোবাসার আবহ ফিরে এসেছে ঠিকই, কিন্তু বেথলেহেমের পথটি ছিল অত্যন্ত কষ্টকর। সামরিক চেকপোস্টে আমাদের দীর্ঘ সময় আটকে রাখা হয়েছিল, তবুও শেষ পর্যন্ত পৌঁছাতে পেরেছি, শুকরিয়া।”

Loading...

একই অভিজ্ঞতার কথা জানান রামাল্লার নিকটবর্তী গ্রাম জিফনা থেকে আসা ঘাসান রিজকুল্লাহ। তিনি বলেন, “চেকপোস্টে অন্তত দেড় ঘণ্টা অপেক্ষার পর আমাদের শহরে ঢোকার অনুমতি দেওয়া হয়। যাত্রাটি ছিল অত্যন্ত ক্লান্তিকর।”

তবে ক্লান্তি সত্ত্বেও উৎসবের সুর তাকে নাড়া দিয়ে গেছে। রিজকুল্লাহ যোগ করেন, “স্কাউট ব্যান্ড আর মিউজিক আমাদের দেশের সেই সুন্দর অতীতের স্মৃতিতে ফিরিয়ে নিয়ে যায়। এই পবিত্র মাটিতে আমাদের নিরাপত্তা ও শান্তিতে বসবাস করার পূর্ণ অধিকার আছে।”

Loading...

পর্যটনে আশার আলো

বেথলেহেমের মেয়র মাহের কানাওয়াতি বলেন, “আজকের এই উৎসব বেথলেহেম, গাজা এবং পুরো ফিলিস্তিনের জন্য এক আশার বার্তা। আমরা বিশ্বকে বলতে চাই যে ফিলিস্তিনিরা শান্তি আর জীবনকে ভালোবাসে।”

কানাওয়াতি আরও জানান, দীর্ঘ মন্দার পর শহরের হোটেলগুলো আবার খুলতে শুরু করেছে এবং পর্যটনের চাকা ঘুরতে শুরু করেছে।

ফিলিস্তিন হোটেল অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান ইলিয়াস আল-আর্জা জানান, এ বছর পর্যটন খাতে প্রায় ৩০ কোটি ডলারের ক্ষতি হয়েছে। তবে বড়দিন উপলক্ষে হোটেলগুলোর ৮০ শতাংশ কক্ষ এখন পূর্ণ। প্রায় ৮০০০ দর্শনার্থী এসেছেন, যাদের মধ্যে ৬০০০ ইসরায়েলে বসবাসরত ফিলিস্তিনি এবং ২০০০ ইউরোপ-আমেরিকার পর্যটক।

Loading...

উত্তর ক্যারোলাইনা থেকে আসা মার্কিন পর্যটক ডোয়েন জেফারসন এবং ইতালীয় পর্যটক জিন চার্লস বেথলেহেমে বড়দিনের এই আমেজ ফিরে আসায় আনন্দ প্রকাশ করেন।

তবে ম্যাঞ্জার স্কয়ারের ব্যবসায়ীদের মধ্যে সাবধানী আশাবাদ বিরাজ করছে। স্যুভেনির দোকানের মালিক জ্যাক জ্যাকম্যান বলেন, “যে পরিমাণ দর্শনার্থী আমরা দেখছি তা যথেষ্ট নয়। আমরা সেই অবরোধের অবসানের প্রার্থনা করি যা বেথলেহেমকে একটি বিশাল কারাগারে পরিণত করেছে।”

ফেসবুকে আমাদের সাথে থাকতে লাইক দিন এখানে

Loading...

আরো পড়ুন

বাংলাদেশ জার্নাল

Loading...

Loading