ঝুঁকির মধ্যে শাহজালালের রানওয়ে

Loading...

ঝুঁকির মধ্যে শাহজালালের রানওয়ে

একটি মাত্র রানওয়ে নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। ২৪ ঘণ্টাই ফ্লাইট ওঠানামা করছে এই রানওয়ে দিয়ে। বাণিজ্যিক ফ্লাইটের পাশাপাশি বিভিন্ন বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমানের কাজেও ব্যবহৃত হচ্ছে।

আর এই কারণে নির্দিষ্ট সময়ে ফ্লাইট অবতরণ বা উড্ডয়ন করতে পারছে না। প্রায়ই আকাশ পথে জট লেগে যাচ্ছে। এতে ত্যক্ত-বিরক্ত হচ্ছেন যাত্রীরা। দিনে দিনে রানওয়ে ঝুঁকির মধ্যেই পড়ে যাচ্ছে।

বিষয়টি বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) গোপন প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।

কাতারে বিভিন্ন কোম্পানিতে নতুন চাকরির খবর

Loading...

ওই সূত্রটি আরও বলেছে, কোনো ভিভিআইপি বাংলাদেশে আসলে বা ত্যাগ করলে দেশের সবকটি বিমানবন্দর আধা ঘণ্টা বন্ধ রাখতে হচ্ছে। যদিও বিশ্বের কোনো দেশে এই ধরনের নিয়মনীতি নেই। শুধু আছে বাংলাদেশেই।

জানতে চাইলে এভিয়েশন বিশ্লেষক কাজী ওয়াহিদুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, আমাদের বড় সমস্যা রানওয়ে। একটি রানওয়ের কারণে একসঙ্গে উড়োজাহাজ ওঠানামা করতে সমস্যা হচ্ছে। এই অঞ্চলে খুব ব্যস্ত শাহজালাল বিমানবন্দর।

ভারতসহ বিশ্বের অনেক দেশে একাধিক রানওয়ে থাকলেও বাংলাদেশে আছে মাত্র একটি। ফলে যোগাযোগ, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও বিভিন্ন সেবায় পিছিয়ে পড়ছি আমরা। অনেক দেশের বিমানবন্দরের রানওয়ে ইন্সট্রুমেন্ট ল্যান্ডিং সিস্টেমের (আইএলএস) উন্নত প্রযুক্তির আইএলএস-৩ ক্যাটাগরিতে চলছে।

কাতারের সব আপডেট হোয়াটসঅ্যাপে পেতে এখানে ক্লিক করুন

Loading...

আর শাহজালালের রানওয়ে এখনো আইএলএস-২ ক্যাটাগরিতে নিজের অবস্থান ধরে রাখতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। একটি রানওয়ে নির্ভর করেই ওঠানামা করছে সামরিক-বেসামরিক বিমান। আর উত্তর পাশ থেকে উড়ছে হেলিকপ্টার।

এটা সিভিল এভিয়েশন নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক হলেও জায়গা ও আর্থিক সামর্থ্যরে অভাব রয়েছে। চট্টগ্রাম বিমানবন্দর সমুদ্রের কাছাকাছি আছে, অতটাও ঘন জনবসতিপূর্ণ নয়। এটি একটি বিকল্প হতে পারে।

বেবিচক-সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে জানায়, শাহজালালের বিকল্প আরেকটি রানওয়ে করার পরিকল্পনা নিয়েছে বেবিচক। মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর রানওয়ের বিষয়টি সামনে আসে।

Loading...

এই নিয়ে বেবিচকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দফায় দফায় বৈঠক করছেন। আগামী মাসের মধ্যে নতুন রানওয়ে তৈরি করার বিষয়ে তারা সরকারের হাইকমান্ডের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। বিকল্প রানওয়ে দ্রুত করতে পারলে প্রশিক্ষণরত বিমানগুলো উড্ডয়ন ও অবতরণ করতে পারবে।

এই প্রসঙ্গে বেবিচকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, একটি রানওয়ে থাকায় ঝুঁকির মধ্যে থাকতে হচ্ছে আমাদের। প্রশিক্ষণরত বিমানের কারণেই বেশি ঝুঁকি হয়ে পড়ছে শাহজালাল।

প্রায়ই ওইসব বিমান রানওয়েতে আসছে উড্ডয়ন বা অবতরণ করতে। ফলে বাণিজ্যিক ফ্লাইট আকাশেই চক্কর দিতে থাকে। এই নিয়ে আমরা সরকারের হাইকমান্ডের সঙ্গে কথা বলব। পাশাপাশি সেনা ও বিমানবাহিনীর ঊর্ধ্বতনদের নিয়ে আলোচনায় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

Loading...

বিকল্প আরেকটি রানওয়ে তৈরি করতে হলে তাদেরও প্রয়োজন হবে। আমরা আর কোনো ধরনের ঝুঁকি নিতে চাচ্ছি না। বেবিচক সূত্র জানায়, শাহজালালের বিদ্যমান রানওয়েটি ৩ হাজার ২শ মিটার দীর্ঘ।

সব ধরনের উড়োজাহাজই ওঠানামা করছে। আবার রানওয়ে ৪৬ মিটার প্রশস্ত হওয়ায় ‘কোড অব’ অনুযায়ী বোয়িং ৭৪৭-৮ বা এয়ারবাস এ-৩৮০-৮০০ উড়োজাহাজসহ সব ধরনের উড়োজাহাজ নির্বিঘেœ ওঠানামা করতে পারে।

বর্তমানে শাহজালাল বিমানবন্দর দিয়ে ৩৬টি বিদেশি কমার্শিয়াল এয়ারলাইনস, ৮টি কার্গো এয়ারলাইনস, ৪টি দেশীয় এয়ারলাইনস এবং হেলিকপ্টারসহ ১৩টি অ্যাভিয়েশনের ফ্লাইট পরিচালনা করছে। বর্তমান রানওয়ের পশ্চিম বা পূর্ব পাশ দিয়েই আরেকটি বিকল্প রানওয়ে করার পরিকল্পনা নিয়েছে বেবিচক।

Loading...

আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের চাপ থাকলে প্রশিক্ষণরত বিমানগুলো বিকল্প রানওয়ে ব্যবহার করার উদ্যোগ নেবে বেবিচক।

বেবিচকের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পরিকল্পিতভাবে টার্মিনাল-৩ নির্মাণ করায় যাত্রীদের স্বাচ্ছন্দ্যের বিষয়টি নিশ্চিত হবে। কিন্তু আমাদের এখানে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো রানওয়ে। একটি রানওয়ে হওয়ার কারণে একসঙ্গে প্লেন টেকঅফ-ল্যান্ডিং করতে পারছে না।

একসঙ্গে যদি দুই-তিনটি এয়ারক্রাফট আসে তাহলে তাদের অপেক্ষা করতে হয়। এই অঞ্চলে ঢাকা বিমানবন্দর খুবই ব্যস্ততম একটি এয়ারপোর্ট। যখন পিক টাইম থাকে, ডমিস্টিক ও ইন্টারন্যাশনাল ফ্লাইট ওঠানামা করে তখন দেখা যায় উড়োজাহাজগুলো রানওয়েতে দাঁড়িয়ে থাকে।

Loading...

একটা উড়লে আরেকটা পারছে না উড়তে। আবার একটা ল্যান্ডিং করলে আরেকটা করতে পারছে না। ফলে প্রায় দেখা যায়, যাত্রীদের উড়োজাহাজের মধ্যে অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। উড়োজাহাজ ঢাকার আকাশে ঢুকে গেছে, কিন্তু ক্লিয়ারেন্স না পেয়ে ল্যান্ডিং করতে পারছে না। কারণ রানওয়েটি সবসময় ব্যস্ত থাকছে।

তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন বাহিনীর প্রশিক্ষণরত বিমান তো ওঠানামা করছে সবসময়। কোনো কারণে যদি রানওয়েতে দুর্ঘটনা ঘটে, একটা পশুপাশি ঢুকে পড়ে তাহলে পুরো রানওয়ে বন্ধ থাকে। যদি রানওয়েতে কোনো দুর্ঘটনা হয়, তাহলে দেখা যায় দুই-তিন ঘণ্টা বন্ধ থাকছে।

এ সমস্যা সমাধানে শাহজালালে নতুন একটি স্বাধীন রানওয়ে জরুরি হয়ে পড়ছে। আর না হয় শাহজালাল ঝুঁকির মধ্যেই থাকবে। ভিভিআইপি বাংলাদেশে এলে বা ত্যাগ করলে আধা ঘণ্টা ফ্লাইট বন্ধ রাখতে হয় সব বিমানবন্দরে। এই ধরনের নিয়ম বিশে^র কোথাও নেই।

Loading...

এই নিয়ম পাল্টাতে হবে। আশা করি, বর্তমান সরকার ব্যবস্থা নেবে। জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) জরিপ বলছে, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রতিবছর ৮ শতাংশ হারে যাত্রী বাড়ছে।

বর্তমানে বছরে প্রায় ৯০ লাখ যাত্রী যাতায়াত করলেও তৃতীয় টার্মিনালটি চালুর পর বিমানবন্দরের যাত্রী ধারণক্ষমতা বছরে ২ কোটি ছাড়িয়ে যাবে। বাড়তি যাত্রী সামাল দিতে প্রয়োজন হবে বাড়তি ফ্লাইটের। ২০৩০ সাল নাগাদ বছরে ওঠানামার চাহিদা দ্বিগুণ হয়ে যাবে।

যদিও বিদ্যমান রানওয়ে দিয়ে বছরে সর্বোচ্চ ১ লাখ ৭০ হাজার উড়োজাহাজ ওঠানামা করা সম্ভব। ২০২৬ সালের পরই শেষ হচ্ছে বিদ্যমান রানওয়ের আয়ুষ্কাল। এরপরই নিরাপদ উড্ডয়নের জন্য বড় ধরনের সংস্কার করতে হবে।

Loading...

নিয়ম অনুযায়ী ১০ বছর পর রানওয়ের বড় ধরনের সংস্কার করতে হয়। এই ধরনের সংস্কারে বিদ্যমান রানওয়ের ওপর ২০ সেন্টিমিটার এসফল্ট কংক্রিট আস্তরণ দেওয়া হয়। মূলত রানওয়ের শক্তি বৃদ্ধির জন্য এসফল্ট কংক্রিটের আস্তরণ দেওয়া হয়।

মেরামতের কাজ শেষ করতে এক বছর লেগে যায়। বিদ্যমান রানওয়ে চালু হয় ১৯৮০ সালে। ১৯৯৬ সালে প্রথম দফায় শাহজালাল বিমানবন্দরের রানওয়ে মেরামতের কাজ করা হয়। ওই সময় রানওয়েতে ২০ সেন্টিমিটার এসফল্ট কংক্রিটের আস্তরণ দেওয়া হয়।

দীর্ঘ সময় মেরামতের উদ্যোগ না থাকায় রানওয়ে সারফেসে লম্বালম্বি ও আড়াআড়িভাবে ফাটলের সৃষ্টি হয়। বেবিচক সূত্র জানায়, শাহজালাল বিমানবন্দরে বাড়তি ফ্লাইটের চাপ সামাল দিতে আরেকটি বিকল্প রানওয়ে নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকার।

Loading...

নতুন রানওয়ের সম্ভাব্যতা সমীক্ষাও করেছিল বেবিচক। তবে জায়গার-সংকট থাকায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল ডিপেনডেন্ট রানওয়ে নির্মাণের।

কারণ, ইন্টারন্যাশনাল সিভিল অ্যাভিয়েশন অর্গানাইজেশনের (আইকাও) নির্দেশনা অনুযায়ী, পাশাপাশি দুটি রানওয়ের মধ্যে অন্তত ৭৫০ ফুট দূরত্ব থাকার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

Loading...

কিছুদিন আগে বেবিচক কর্মকর্তারা বৈঠক করে প্রাথমিক স্থান নির্ধারণ করেছে। সরকারের সম্মতি মিললে চলতি বছরই এর কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।

আরও পড়ুন

দেশ রূপান্তর

Loading...

Loading