আরব বসন্তের ১৫ বছর: মধ্যপ্রাচ্যের ক্ষমতাচ্যুত নেতাদের পরিণতি
Loading...

আরব বসন্তের ১৫ বছর: মধ্যপ্রাচ্যের ক্ষমতাচ্যুত নেতাদের পরিণতি
তিউনিসিয়ার রাস্তায় দাঁড়িয়ে নিত্যপণ্য বিক্রি করতেন ২৬ বছর বয়সী মোহাম্মদ বুয়াজিজি। ২০১০ সালের ১৭ ডিসেম্বর তার ঠেলাগাড়ি জব্দ করে পুলিশ।
ওইদিনই বেকারত্ব, হয়রানি, নির্যাতনের প্রতিবাদে প্রকাশ্যে নিজের গায়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিলেন বুয়াজিজি। ২০১১ সালের ৪ জানুয়ারি তিনি মারা যান।
কাতারের সব আপডেট হোয়াটসঅ্যাপে পেতে এখানে ক্লিক করুন
Loading...
বুয়াজিজির নিজের গায়ে লাগানো সেই আগুন সারা তিউনিসিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশের হয়রানি ও কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার প্রতিবাদে বিক্ষুদ্ধ জনতা রাস্তায় নেমে আসে। ২৮ দিনের তীব্র বিক্ষোভে তিউনিসিয়ার প্রেসিডেন্ট জিন এল আবেদিন বেন আলি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। দীর্ঘ ২৩ বছর দেশটির ক্ষমতায় ছিলেন।
২০১১ সালে তিউনিসিয়ার এ পরিবর্তনের প্রেরণায় মিসর, লিবিয়া, ইয়েমেন ও সিরিয়ার কোটি কোটি মানুষ সড়কে নেমেছিলেন। ইতিহাসে যা আরব বসন্ত নামে পরিচিত। আর এ বিক্ষোভ দেশগুলোর পাঁচজন নেতাকে পদচ্যুত করে। আল জাজিরা সেই নেতাদের বর্তমান অবস্থা অনুসন্ধান করেছে।
Loading...

তিউনিসিয়া: জাইন এল আবেদিন বেন আলি
জীবনকাল: ১৯৩৬-২০১৯
শাসনকাল: ১৯৮৭-২০২২ (২৩ বছর)
পরিণতি: নির্বাসনে মৃত্যু
১৯৮৭ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণ করেন বেন আলি। এরপর তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হাবিব বুরগিবাকে অযোগ্য ঘোষণা করে অভ্যুত্থান ছাড়াই ক্ষমতা দখল করেন।
নিরাপত্তা পরিষেবা ও একটি অনুগত রাজনৈতিক দলের ওপর ভিত্তি করে একটি কঠোর শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। এমনকি তার শাসনের বিরুদ্ধে যেকোনো পরিস্থিতি কঠোর হাতে দমন করেন। তার শাসনামালে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হলেও দেশটি দুর্নীতি ও বৈষম্য জর্জরিত হয়ে পড়ে। খর্ব হয় সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা।
হয়রানি, যুবক বেকারত্ব ও গভীরতর দুর্নীতির বিরুদ্ধে ক্ষোভ ফেটে পড়ে। সেই জেরে ২০১০ সালের ১৭ ডিসেম্বর নিজের গায়ে আগুন দেন মোহাম্মদ বুয়াজিজি। প্রায় এক মাসের বিক্ষোভের পর ১৪ জানুয়ারি পতন হয় বেন আলি সরকারের। দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন সৌদি আরব চলে যান তিনি।
পরবর্তীতে তিউনিসিয়ার আদালত তাকে অনুপস্থিতিতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়, যা তিনি ভোগ করেননি। ২০১৯ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর, ৮৩ বছর বয়সে সৌদি আরবের জেদ্দায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
Loading...

মিসর: হোসনি মোবারক
জীবনকাল: ১৯২৮-২০২০
শাসনকাল: ১৯৮১-২০১১ (৩০ বছর)
পরিণতি: মিসরে মৃত্যুবরণ
১৯৮১ সালে মিসরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাতের হত্যাকাণ্ডের পর ক্ষমতায় বসেন হোসনি মোবারক। সামরিক ও জরুরি আইন ব্যবহার করে ক্ষমতা সংহত করেন তিনি। সেইসঙ্গে কঠোর শাসন, দমনমূলক নীতি, সীমিত রাজনৈতিক স্বাধীনতা ও ব্যাপক দুর্নীতি চলতে থাকে তার শাসনামলে।
২০১১ সালের ২৫ জানুয়ারি মিসরের পুলিশ দিবসে উচ্চ বেকারত্ব, দারিদ্র্য ও রাজনৈতিক দমন প্রক্রিয়ায় ক্ষুব্ধ জনগণ সড়কে নেমে মোবারকের পদত্যাগ দাবি করে। ১৮ দিনের বিক্ষোভের পর ১১ ফেব্রুয়ারি মোবারক পদত্যাগ করেন।
নিরস্ত্র বিক্ষোভকারীদের হত্যার মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয় তাকে। কিন্তু উচ্চ আদালত সেই সাজা বাতিল করে পুনর্বিচারের নির্দেশ দেন। পুনর্বিচারে দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হয়ে ছয় বছর কারাদণ্ডে দন্ডিত হন। যদিও শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় খুব কম সময় কারাগারে কাটাতে হয় তাকে। ২০১৭ সালে তাকে খালাস দেয়া হয় আর ২০২০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ৯১ বছর বয়সে কায়রোতে মৃত্যুবরণ করেন হোসনি মোবারক।
কাতারে বিভিন্ন কোম্পানিতে নতুন চাকরির খবর
Loading...

ইয়েমেন: আলি আবদুল্লাহ সালেহ
জীবনকাল: ১৯৪৭-২০১৭
শাসনকাল: ১৯৭৮-২০১২ (৩৩ বছর)
পরিণতি: হুথি বিদ্রোহীদের হাতে নিহত
৩৩ বছর ধরে ইয়েমেন শাসন করেছেন আলি আবদুল্লাহ সালেহ। প্রথমে উত্তর ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট (১৯৭৮) ও পরে সংযুক্ত ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট (১৯৯০) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
আরব বসন্তের বিক্ষোভের পর ২০১২ সালে ক্ষমতা হস্তান্তরের চুক্তির মাধ্যমে পদত্যাগ করেন তিনি।
কিন্তু হুথি বিদ্রোহীদের সঙ্গে অপ্রত্যাশিত জোট গড়ে তোলেন আলি আবদুল্লাহ সালেহ। যার সাহায্যে ২০১৪ সালে রাজধানী সানা দখল করে হুতি বিদ্রোহীরা। তেব চুক্তি ২০১৭ সালে ভেঙে যায়। আর সেসময় সালেহ হুথিদের বিরুদ্ধে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন। এ পরিস্থিতিতে ৭৫ বছর বয়সী সালেহকে হত্যা করে হুথিরা।
Loading...

লিবিয়া: মুয়াম্মার গাদ্দাফি
জীবনকাল: ১৯৪২-২০১১
শাসনকাল: ১৯৬৯-২০১১ (৪২ বছর)
পরিণতি: বিদ্রোহীদের হাতে নিহত
গাদ্দাফি ছিলেন সেনা অফিসার। ১৯৬৯ সালে লিবিয়ার রাজতন্ত্র বিলুপ্ত করে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেন তিনি। দীর্ঘ চার দশকের শাসনামলে দেশ তেল উত্তোলনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছিলেন তিনি। আর এ কারণেই পশ্চিমাদের চক্ষুশূলে পরিণত হন। যদিও ২০০০-এর দশকের শুরুতে তিনি পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে পুনরায় যোগাযোগ শুরু করেন।
এদিকে, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১১ সালে বেঙ্গাজিতে বিক্ষোভ শুরু হয়। শান্তিপূর্ণ এ বিক্ষোভ ক্রমশ সশস্ত্র বিদ্রোহ ও গৃহযুদ্ধের রূপ নেয়। আগস্টে ত্রিপোলি দখলের মধ্য দিয়ে গাদ্দাফি ক্ষমতার পতনের সূচনা হয়। ওই বছরের ২০ অক্টোবর ন্যাটোপন্থী বিদ্রোহীদের হাতে নিহত হন মুয়াম্মার গাদ্দাফি।
Loading...

সিরিয়া: বাশার আল-আসাদ
জীবনকাল: ১৯৬৫-বর্তমান)
শাসনকাল: ২০০০-২০২৪ (২৪ বছর)
পরিণতি: পদত্যাগ, নির্বাসন
২০০০ সালে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট হন ৩৪ বছর বয়সী বাশার আল-আসাদ । তার বাবা হাফেজ আল-আসাদ ১৯৭০ সালে সেনাবাহিনীর কাছ থেকে ক্ষমতা দখল করেছিলেন। ২৯ বছর সিরিয়া শাসন করেছিলেন তিনি।
সিরিয়ার বিপ্লবের সূচনা হয় কয়েকজন কিশোরের স্কুলের দেয়ালে সরকারবিরোধী গ্রাফিতি থেকে। সরকারি কঠোর দমন নীতি আন্দোলনকে নাগালের বাইরে নিয়ে যায়। শুরু হয় দীর্ঘ ১৪ বছরের গৃহযুদ্ধ। এর ফলে দেশের অর্ধেক জনগণ বাস্তুচ্যুত হয়, তৈরি হয় অভিবাসী সংকট।
Loading...
২০২৪ সালের ৮ ডিসেম্বর আসাদের ৫৩ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। হায়াত তাহরির আল-শাম ও অন্যান্য বিদ্রোহী গোষ্ঠীর নেতৃত্বে চালানো সহিংস অভিযান দ্রুত সিরিয়ার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে পরাজিত করে। বিদ্রোহীরা দামেস্কে প্রবেশ করলে বাশার আল-আসাদ ও তার পরিবার মস্কো পালিয়ে যান। বর্তমানে সেখানেই তারা নির্বাসনে রয়েছেন।
ফেসবুকে আমাদের সাথে থাকতে লাইক দিন এখানে
Loading...
আরো পড়ুন
Loading...






