বাংলাদেশিদের জন্য সংকুচিত হচ্ছে বিদেশের শ্রমবাজার
Loading...

বাংলাদেশিদের জন্য সংকুচিত হচ্ছে বিদেশের শ্রমবাজার
বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান ভিত্তি ধরা হয় প্রবাসী আয়। শ্রমিকদের পাঠানো রেমিটেন্সের মাধ্যমেই দেশে সবচেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা আসে। কিন্তু আস্তে আস্তে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির শীর্ষ উৎস সংকুচিত হচ্ছে।
কারণ, গত কয়েকবছর ধরে ধারাবাহিকভাবে কমছে বৈদেশিক কর্মসংস্থান। দক্ষ শ্রমিকের অভাব ও নতুন বাজার সৃষ্টির ব্যর্থতাকে এর প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করছেন বাজার বিশ্লেষকরা।
সেইসঙ্গে জনশক্তি আমদানিকারক দেশগুলোর বিভিন্ন বিধিনিষেধ এবং বাংলাদেশের শ্রমিকরা প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ার কারণেও এমনটি ঘটছে বলে মনে করছেন তারা।
কাতারে বিভিন্ন কোম্পানিতে নতুন চাকরির খবর
Loading...
বাংলাদেশ জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্যানুযায়ী, আগে থেকেই ধারাবাহিকভাবে নিম্নমুখী বিদেশের শ্রমবাজার। কিন্তু গত একবছরে বিদেশে বাংলাদেশের জনশক্তি রফতানির হার কমেছে প্রায় ৩০ শতাংশ।
বর্তমানে বিশ্বের মাত্র তিনটি দেশে (সৌদি আরব, কাতার ও সিঙ্গাপুর) প্রায় ৯০ ভাগ জনশক্তি রফতানি করছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই শ্রমবাজার ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। নতুন বাজার সৃষ্টির ব্যর্থতার পাশাপাশি বাংলাদেশি শ্রমিকদের ভাষা অদক্ষতা ও আচার-আচরণও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে শ্রমবাজারে।
কাতারের সব আপডেট হোয়াটসঅ্যাপে পেতে এখানে ক্লিক করুন
Loading...
বিএমইটি’র তথ্যানুসারে, ২০২২ সালে বিভিন্ন দেশে কাজ নিয়ে বিদেশ গেছেন ১১ লাখের বেশি কর্মী। ২০২৩ সালে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৩ লাখে। তবে ২০২৪ সালে তিন লাখ কমে ১০ লাখে নেমে আসে। চলতি বছরে এটি আরও কমে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কারণ, চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে দেশ ছেড়েছেন চার লাখ ২০ হাজার কর্মী। তাদের মধ্যে তিন লাখই গেছে সৌদি আরবে। এর পর রয়েছে কাতার। দেশটিতে ৪০ হাজার কর্মী পাঠানো হয়েছে। আর ২৬ হাজার কর্মীর গন্তব্য সিঙ্গাপুরে।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, সৌদি আরবে যেতে অধিকাংশ কর্মী পরিচিত বা স্বজনের মাধ্যমে নিয়োগের চাহিদাপত্র সংগ্রহ করে থাকেন। এ নিয়ে একটি দালাল শ্রেণিও তৈরি হয়েছে। তারা নকল নিয়োগপত্র গছিয়ে দেয়। তাই কেউ কেউ দেশটিতে গিয়ে কাজ না পেয়ে প্রতারিত হন।
Loading...
এটি দ্রুত বন্ধ হওয়া উচিত। এদিকে, সৌদি আরবে জুন থেকে ভিসা বন্ধ। এ ছাড়া, নতুন চাহিদাও কমে গেছে। কর্মী নিয়োগে তারা আরও যাচাই–বাছাই শুরু করতে পারে। তাই বিকল্প শ্রমবাজার খুঁজতেই হবে।
রিক্রুটিং এজেন্সি মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) সাবেক যুগ্ম মহাসচিব ফখরুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, কাতার ও ওমানের শ্রমবাজার প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।
মূলত শ্রমবাজারের ক্ষেত্রে আকষর্ণীয় চারটি দেশে শ্রমিক নেওয়া প্রায় বন্ধ থাকায় বিদেশগামী শ্রমিকদের হার অনেকটাই কমে গেছে। অন্তবর্তী সরকারকে কূটনীতিক ও ব্যক্তিগত যোগাযোগ বাড়ানোর মাধ্যমে চার দেশের শ্রমবাজারে নতুন করে প্রাণ ফেরানোর চেষ্টা করতে হবে।’
Loading...
তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানের শ্রমবাজার মূলত সৌদি আরব নির্ভর। কিন্তু এই বাজারেও শ্রমিক পাঠানোর হার কমে যাচ্ছে। আগে দেশটিতে শ্রমিক পাঠানোর ক্ষেত্রে একটি এজেন্সিকে ২৫ জনের বেশি পাঠাতে দূতাবাসের সত্যায়ন নিতে হতো।
কিন্তু এখন পাঁচজনের বেশি শ্রমিক পাঠালেই সত্যায়নের বিধি চালু করা হয়েছে। সত্যায়ন প্রক্রিয়াটিতে রয়েছে দীর্ঘসূত্রিতা ও জটিলতা।
এ কারণে এজেন্সিগুলো নিদির্ষ্ট হারে শ্রমিক পাঠাতে পারছে না। সত্যায়ন প্রক্রিয়ায় শিথিলতা না এলে সৌদি আরবে কাঙ্ক্ষিত হারে শ্রমিক পাঠানো কঠিন হয়ে পড়বে।’
Loading...
বায়রা’র সাবেক এই যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘মালয়েশিয়াও বাংলাদেশি শ্রমিকদের অন্যতম গন্তব্যের দেশ। কিন্তু সিন্ডিকেটের কারণে দেশটিতে শ্রমিক পাঠানো বন্ধ রয়েছে। বর্তমান সরকারকে এই সমস্যার আশু সমাধান করতে হবে। সেক্ষেত্রে কূটনীতিক তৎপরতা বাড়ানো জরুরি।’
বিএমইটি’র তথ্য বলছে, ২০২২ সালে বিদেশে নারী কর্মী গেছেন ১ লাখ ৫ হাজার ৪৬৬ জন। ২০২৩ সালে এ সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ৭৬ হাজার ১০৮, অর্থাৎ আগের বছরের তুলনায় কমে ২৮ শতাংশ।
গতবছর এটি আরও কমে ৬১ হাজার ১৫৮ জনে নেমে এসেছে। কমার হার ২০ শতাংশ। চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে গেছেন ২৪ হাজার ৬১৭ নারী। এর মধ্যে সৌদি আরবেই ১৭ হাজার ৭৮৬ জন। আর সাড়ে চার হাজার নারী গেছেন জর্ডানে।
Loading...
অর্থাৎ, গত কয়েকবছরে আনুপাতিক হারে নারী কর্মীর সংখ্যা কমছে। ২০২২ থেকে ২০২৪ সাল— এই তিন বছর বিদেশে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়। এ সময় বিদেশে গেছেন ৩৪ লাখের বেশি কর্মী। এর মধ্যে নারী কর্মী গেছেন আড়াই লাখের কম।
অথচ ২০১৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর লক্ষাধিক নারী কর্মী বিদেশে গেছেন। ২০২০ সালে করোনা মহামারির কারণে এ সংখ্যা কমে আসে। কিন্তু পরের দুই বছর ফের বাড়লেও পরবর্তী দুই বছর ধরে কমছে।
বিদেশে বাংলাদেশিদের কর্মসংস্থানের শুরু থেকেই শীর্ষে আছে সৌদি আরব। এখন পর্যন্ত বিদেশে যাওয়া কর্মীদের ৩৪ শতাংশেরই গন্তব্য মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশ। চলতি বছরের মে পর্যন্ত পাঁচ মাসে কাজের জন্য দেশ ছেড়ে যাওয়া কর্মীদের ৭৩ শতাংশই গেছেন সৌদি আরবে।
Loading...
তবে এই বাজারটিও ধীরে ধীরে সংকুচিত হয়ে আসছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে দেশটিতে গেছে ৭৬ হাজার ৬১৮ জন। আর ফেব্রুয়ারি মাসে যায় ৪৪ হাজার ২৫৮ জন। এছাড়া, মার্চে ৮০ হাজার ৭০৮ জন, এপ্রিল ২৮ হাজার ৬৭১ জন এবং মে মাসে ৬৯ হাজার ৭৪৯ জন কর্মী সৌদি আরবে গেছেন।
অন্যদিকে, বাংলাদেশিদের জন্য দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই) জনশক্তি রফতানি বলতে গেলে বন্ধই রয়েছে। দেশটিতে জানুয়ারি মাসে গেছে ৪৯৪ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৬৫৬ জন, মার্চে ২৫৩ জন, এপ্রিলে ৩৫৯ ও মে মাসে ১ হাজার ২৩১ জন গেছেন।
কাতারে জানুয়ারি মাসে ৬ হাজার ৮৮৩ জন, ফেব্রুয়ারি মাসে ৭ হাজার ১৫০ জন, মার্চে ৯ হাজার ৬৩, এপ্রিলে ৬ হাজার ২৯৫ জন এবং মে মাসে ১০ হাজার ১৭ জন কর্মী গেছেন।
Loading...
সিঙ্গাপুরে জানুয়ারি মাসে গেছেন ৪ হাজার ৮৪৭, ফেব্রুয়ারিতে ৩ হাজার ৭৩৫ জন, মার্চে ৫ হাজার ১২৯ জন, এপ্রিলে ৬ হাজার ৮৮ জন ও মে মাসে ৬ হাজার ৫৯০ জন।
কুয়েতে জানুয়ারিতে গেছেন ২ হাজার ৮৭৮ জন, ফেব্রুয়ারিতে ২ হাজার ৮৪ জন, মার্চে ২ হাজার ৪৩৭ জন, এপ্রিলে ১ হাজার ৪২৮ জন ও মে মাসে ২ হাজার ১৮৪ জন। জর্ডানে জানুয়ারিতে ৮৭৪ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৮৭৩ জন, মার্চে ১ হাজার ৭৫ জন, এপ্রিলে ১ হাজার ১৪৫ জন এবং মে মাসে গেছেন ৯৫৮ জন।
তৃতীয় শীর্ষে থাকা ওমানের বাজারও বলতে গেলে বন্ধ রয়েছে গতবছর থেকে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ওমানে যান মাত্র ১৮ জন শ্রমিক। ফেব্রুয়ারি ওমানে যাওয়া শ্রমিকের সংখ্যা মাত্র ছয়জন, মার্চে তিনজন, এপ্রিলে চারজন এবং মে মাসে গেছেন ১২ জন।
Loading...
বলতে গেলে গত বছরের জুন থেকে বন্ধ মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারও। দেশটিতে জানুয়ারিতে ১ হাজার ২৮৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩০১জন, মার্চে ৩০৬ জন, এপ্রিল ২৪৭ ও মে মাসে ৩৪৬ জন কর্মী গেছেন। অবশ্য এই শ্রমবাজারটি দ্রুত চালু করতে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা চলছে।
সম্ভাবনাময় শ্রমবাজার জাপান। দেশটিও বাংলাদেশ থেকে বেশি সংখ্যক শ্রমিক নিতে চায়। কিন্তু ভাষা সীমাবদ্ধতা ও দক্ষতার অভাবে দেশটি বাংলাদেশিদের জন্য পর্যাপ্ত ভিসা ইস্যু করতে পারছে না। এছাড়া, দক্ষিণ কোরিয়ায় চাহিদামতোও কর্মী পাঠানো যাচ্ছে না। দক্ষিণ কোরিয়ায় জানুয়ারিতে গেছেন ১৩৪ জন শ্রমিক। এ ছাড়া, ফেব্রুয়ারি মাসে ১১০ জন, মার্চে ২৯৩ জন, এপ্রিলে ৬৮ জন ও মে মাসে ২৩৫ জন শ্রমিক দক্ষিণ কোরিয়ায় গেছেন।
অপরদিকে, ইউরোপে কর্মী পাঠানোর সম্ভাবনাও সেভাবে কাজে লাগানো যাচ্ছে না। ইউরোপে যুক্তরাজ্যের পর সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি বসবাস করে ইতালিতে। শ্রমবাজারের ক্ষেত্রে স্বপ্নের দেশ ইতালি।
Loading...
কিন্তু দেশটিতে শ্রমিক পাঠানোর ক্ষেত্রে ভুয়া কাগজ ও নিয়োগপত্র দেখিয়ে ভিসা আবেদনসহ জালিয়াতির অভিযোগে ভিসা দেওয়া একপ্রকার বন্ধই রয়েছে।
তবে এখন নতুন করে ধীরগতিতে যাচাই-বাছাই শেষে ভিসা দিচ্ছে দেশটি। ইতালিতে জানুয়ারি মাসে ৩৩৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে ২২১ জন, মার্চে ৪৬৯ জন, এপ্রিলে ২২০ জন এবং মে মাসে ৭৮৯ জন কর্মী ভিসা পেয়েছেন।
অভিবাসন খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্দিষ্ট কয়েকটি শ্রমবাজারের ওপর নির্ভরতার কারণেই বিদেশে কর্মী পাঠানোর হার বাড়ছে না। এর কারণ হিসেবে তারা বলছেন, সৌদি আরবের চাহিদা একই রকম থাকবে না।
Loading...
২০৩৪ সালের ফুটবল বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ হিসেবে সৌদিতে ব্যাপক অবকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে। সেজন্য মাঝখানে কর্মীর চাহিদা বেড়েছিল। তবে এরই মধ্যে তা কমতেও শুরু করেছে। গত জুন থেকে তারা ভিসা বন্ধ রেখেছে।
মধ্যপ্রাচ্যে নারী কর্মীদের প্রয়োজনীয় সহায়তা নিশ্চিত হয়নি। এ ছাড়া, সৌদি আরবে বাসাবাড়ির কাজে যে শ্রম দিতে হয়, সে তুলনায় তেমন আয় হয় না।
এর বাইরে বিভিন্ন অভিযোগ তো আছেই। তাই নারীদের আগ্রহ কমে গেছে। আবার মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো বিকল্প উৎস হিসেবে আফ্রিকার দেশ থেকে কর্মী নিচ্ছে। দ্রুতই নতুন ঘোষণা দিতে পারে দেশটি।
Loading...
বিদেশের শ্রমবাজার সংকুচিত হয়ে আসার প্রধান কারণ একক দেশের ওপর নির্ভরতা বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তারা বলছেন, একটা সময় কোনো এক দেশে বিপুল হারে কর্মী যেতে শুরু করে। এর পর কিছু সমস্যা তৈরি হলে ওই শ্রমবাজার কয়েকবছরের জন্য বন্ধ হয়ে যায়।
তখন আরেক দেশে কর্মী পাঠানো শুরু হয়। এভাবে ঘুরেফিরে হাতে গোনা কয়েকটি দেশের শ্রমবাজারে সীমিত হয়ে আছে বাংলাদেশিদের কর্মসংস্থান।
আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে প্রবেশের প্রধান মাপকাঠি হচ্ছে যোগ্যতা ও দক্ষতা। কিন্তু এই দুটি ক্ষেত্রেই আমাদের তারুণ্যনির্ভর সম্ভাব্য শ্রমশক্তি পিছিয়ে আছে।
Loading...
উল্লিখিত দেশগুলো ছাড়াও দূরপ্রাচ্য এবং ইউরোপের উন্নত দেশগুলোতে শ্রমবাজার রয়েছে। কিন্তু দক্ষতার অভাবে উন্নত দেশগুলোতে তারা প্রবেশাধিকার পাচ্ছেন না।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, দক্ষতানির্ভর করে যুগোপযোগী কারিগরি শিক্ষা এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যথাযথ প্রশিক্ষণের ওপর বাংলাদেশিদের গুরুত্ব দিতে হবে।
এ ছাড়া, ভাষা-দক্ষতা থাকাও বিশ্ব শ্রমবাজারে প্রবেশের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ যোগ্যতা। এখন এই দুটি দিকের ওপরই আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে। সরকারকেই বহির্বিশ্বের উপযোগী প্রশিক্ষিত জনবল তৈরির উদ্যোগ নিতে হবে।
আরও পড়ুন
Loading...
